সর্ব রোগী আমলকি উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য
আমলকি বা (Indian Gooseberry) বৈজ্ঞানিক নাম (Phyllanthus) এটি এমন একটি ফল যা প্রাকৃতির অন্যতম আশ্চর্য সৃষ্টি। এটি আকারে ক্ষুদ্র হলেও এর গুনাগুন এতটাই ব্যাপক যে এটিকে সুপার ফুড এর চাইতেও ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া যায়। টক, কষা, তেতো--এমন কি মিষ্টি সহ আছে অসাধারণ সব পুস্টিগুণ যা শরীর, চুল, ত্বক এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী আয়ুর্বেদ। আমলকিকে অমৃত ফল বলা হয় কারণ এটি শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত হয়ে থাকে এর ছোট হালকা সবুজ পাতা এবং স্ত্রী পুরুষ ফুল একই গাছের জন্মায় তাছাড়া আয়ুর্বেদে আমলকি কি বলা হয় রাসায়নিক পদার্থ যার মধ্যে সেরা বার্ধক্য প্রক্রিয়া বজায় রাখে এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমলকি, হরতকি ও বহেরাকে একত্রে ’ত্রিফলা’ বলা হয়। যা হাজারো রোগের মহৌষধ হিসেবে সমৃদ্ধ হয়ে আছে।
আমলকির গুনাগুন ও পুষ্টিগুণঃ
আমলকির প্রধান আকর্ষণ হল এর অবিশ্বাস্য পরিমাণে ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক এসিড)। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে একটি আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুন বেশি অ্যাপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি এবং পেয়ারার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে তাছাড়া আরো কিছু উপাদান রয়েছে তার নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- পুষ্টি উপাদান পরিমান
- ভিটামিন এ ২০IU
- ভিটামিন সি ৪৫০-৬৮০ মি.গ্রা
- আয়রণ ১.২ মি.গ্রা
- ফরফরাস ২০ মি.গ্রা
- ক্যালসিয়াম ২৫ মি.গ্রা
- কার্বহাইড্রেট ১৪ গ্রাম
- পানি ৮৬-৮৮%
এছাড়া আরো কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে তবে সবচাইতে ভিটামিন সি তুলনা মূলক অনেকগুণ বেশি।
আমলকির স্বাস্থ্য ও উপকারিতাঃ
আমলকির গুণের কোন শেষ নেই এটি শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের জন্যই উপকারী। আমলকি মূলত এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, ইমিউনো-মডুলেটরি, এলজিটামিন, পলিফেনাল এর জন্য পরিচিত নিচে আমলকির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা গুলি তুলে ধরা হলো-
- ভিটামিন সি: আমলকিতে থাকা বিপুল পরিমাণ ভিটামিন সি সেতো রক্ত রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়িয়ে শরীরকে (immunity)শক্তিশালী করে তোলে। সর্দি কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি উন্নত করে: আমলকিতে থাকা ফাইভার হজমের সহায়তা করে এটি পেটের গ্যাস অম্লতা কষ্টকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন সকালে একটা চামচ আমলকির রস খেলে হজমে আরাম পাওয়া যায়।
- ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: আমলকি ইনসুলিন নিরসনে সহায়তা করে ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হিসাবে বিবেচিত।
- চুল ও ত্বকের পরিচর্যা: আমলকি চুলের জন্য এটি প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা অ্যামাইনো এসিড প্রোটিন এবং ক্যারোটিন চুলের গোড়ায় মজবুত করে চুল পড়া রোধ করে এবং চুল দ্রুত পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে থাকে। বিভিন্ন তেল শ্যাম্পু এবং টনিকের থেকে এটা ব্যবহৃত হয়। তবে সবচাইতে বেশি উপকার পাওয়া যায় আমলকি বেটে নরম করে চুলের গোড়ায় দিলে ৩০ মিনিট রেখে ধরে দিলে আরো উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
এছারাও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে মানসিক প্রশান্তি আনে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
আমলকি খাওয়ার পদ্ধতিঃ
- আমলকির সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পেতে টাটকা আমলকি কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া উত্তম।
- গুড়া পাউডার শুকনো আমলকির গোড়া এই গ্লাস জল বা দুধের সাথে মিশে খাওয়া যায় এটি এসিডিটির সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
- আমলকির আচার একটি জনপ্রিয় খাবার যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়।
- আমলকির তেল মাথায় ব্যবহার করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
আমলকি ব্যবহারের সতর্কতাঃ
- যাদের পেটে এসিডিটি বেশি তারা খালি পেটে আমলকি না খাওয়াই ভালো। আমলকি খেলে রক্তচাপ ও শর্করা কমে যেতে পারে।
- আমলকি মূত্র বর্ধক হওয়ায় অতিরিক্ত খেলে শরীরে জলের ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই আমলকি খেলে পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত।
- উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের আমলকি খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ এটি সোডিয়ামের মাত্রা কে প্রভাবিত করতে পারে।
- কোন প্রকার ওষুধ গ্রহণের সময় আমলকি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত এবং শিশুদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে দেওয়া উচিত।

ছায়ানীড় ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url